ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলা বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন, যা ড. ইউনূসের পক্ষে একটি বড় আইনি বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মামলার পটভূমি
-
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২৩ সালের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
-
২০২৩ সালের ১২ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ অভিযোগ গঠন করে।
-
ড. ইউনূসসহ সাতজন অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করলেও ২৪ জুলাই তা খারিজ হয়।
-
পরে আপিল বিভাগে গেলে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর আপিলের অনুমতি মেলে।
আদালতের যুক্তি
আপিল বিভাগ তাদের রায়ে উল্লেখ করেন:
-
অর্থের প্রকৃতি: শ্রমিকদের পাওনা বেতন বিতরণ নিয়ে বিরোধ বাণিজ্যিক/সিভিল প্রকৃতির, যা ফৌজদারি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত নয়।
-
প্রমাণের অভাব: দুদকের অভিযোগে টাকা আত্মসাতের চূড়ান্ত প্রমাণ নেই, বরং হিসাবগত বিভ্রান্তি রয়েছে।
-
প্রক্রিয়াগত ত্রুটি: মামলা দায়ের ও প্রত্যাহার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে।
মামলার বিতর্কিত দিক
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন আদালতে দাবি করেন:
-
“২০২৩ সালের ১১ আগস্ট দুদক বিনা নোটিশে মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা করে, যা আইনগতভাবে অবৈধ।”
-
“এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, যেখানে ড. ইউনূসকে হয়রানি করা হয়েছে।”
প্রতিক্রিয়া
-
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান: “আদালতের রায় মেনে নিচ্ছি, তবে আইনি বিকল্প বিবেচনা করা হবে।”
-
ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে: “আইনের শাসনের প্রতি আস্থা রাখি। এই রায় ন্যায়বিচারের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।”
পরিসংখ্যান
২০২২-২৪ সময়ে দুদক কর্তৃক দায়ের করা ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার মধ্যে এটিই প্রথম যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ রেহাই পেলেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ: রাষ্ট্রপক্ষ এখন চূড়ান্ত আপিলের জন্য হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
এই রায় বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, যেখানে অর্থনৈতিক মামলাগুলোতে অভিযুক্তদের অধিকার রক্ষায় আদালতের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
জ/ক