পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা ফ্ল্যাশ
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে সরে আসার ঘোষ দেন । এসময় তিনি শিল্পকলা একাডেমির সচিবের হাতে জনসমক্ষে তার পদত্যাগপত্র তুলে দেন। ‘স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার কারণে’ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি জানান। সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “আমার বয়স হয়েছে এখন ৭০ বছর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জন্য আমি যে কাজ করেছি, এখন আর মন্ত্রণালয়ে দশবার করে লড়াই করে তাদের হাত-পা ধরার আমার কোনো জায়গা নাই, দরকারও নাই।”
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবের’ সমাপনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে অনেকটা ক্ষুব্ধভাবেই তিনি এই কথাগুলো বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ যেমন চেয়েছিলেন ‘১৬৫ কোটি টাকা’, সেটা দেয়া হয়নি। বরং যারা বরাদ্দের সাথে থাকেন তারা “মনে করে এটা তাদের নিজের টাকা, এভাবে টাকাটা বণ্টন করা শুরু করেছে তারা।”
সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “আমাদের যেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হয় তার জন্য সবার আগে দরকার এই মন্ত্রণালয়ে আমাদের যত রকম কর্মচারীরা আছেন তারা একটু বুঝুক যে এখানে একটা গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী জায়গায় আমরা কাজ করছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “এখানে কাজ করা সম্ভব হবে না।” এরপর তিনি মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন।
পদত্যাগপত্র দেয়ার পর সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “যেহেতু পদত্যাগপত্র আমি দিয়ে দিয়েছি, আমাকে যে বলতে বাধা দিয়েছিল যে- আমরা আদিবাসী কথাটা বলতে পারবো না। আমি আজকে বলছি, আদিবাসীদের বিরুদ্ধে… আদিবাসীদের দাবি পূর্ণ হোক, তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হোক, তাদের অধিকার অর্জিত হোক। আমি একইসাথে চাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম হোক।”
যদিও উপস্থিত দর্শক, মঞ্চে উপস্থিত অভ্যুত্থানে নিহত আনাসের মা ও শিল্পকলার কর্মকর্তারা সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগ মানতে চাননি। শিল্পকলা একাডেমির সচিবের এই পদত্যাগপত্র গ্রহণের এখতিয়ার আছে কিনা সে প্রশ্নও রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া ছাড়া এটি কার্যকর হওয়ার কথাও না।
শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন পরবর্তীতে বলেন, “আমি শিল্পকলার সচিব হিসেবে এটা শুধু হাতে নিয়েছি। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মহাপরিচালক পদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তার এই পদত্যাগের ঘটনা শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সৈয়দ জামিল আহমেদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূলত স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারা এবং বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত সমস্যাকে দায়ী করা হচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে বলেন, “এখানে কাজ করা সম্ভব হবে না।” তার এই পদত্যাগের পর শিল্পকলা একাডেমির ভবিষ্যৎ ও সংস্কৃতি অঙ্গনের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা ও শিল্পীরা সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের ঘটনায় হতবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। তারা মনে করছেন, তার মতো একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তির পদত্যাগ শিল্পকলা একাডেমির জন্য একটি বড় ক্ষতি। এদিকে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী, পদত্যাগপত্রটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি এবং মন্ত্রণালয়ে জমা না হওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর হবে না।
সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের এই ঘোষণা শিল্পকলা একাডেমির ভবিষ্যৎ ও সংস্কৃতি অঙ্গনের উন্নয়ন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তার মতো একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তির পদত্যাগ শিল্পকলা একাডেমির জন্য একটি বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি এই সংকট থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসে এবং ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেয়।