[t4b-ticker] ঘণ্টা তিনেকেই উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের স্বাদ; 'উত্তর আমেরিকার চালচিত্র' ও 'নিঃশেষে নৈবেদ্য' বই দুটির প্রকাশনা উৎসব - Dhaka Flash



ব্রেকিং নিউজ:
আজ : ২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, বুধবার প্রকাশ করা : মে ১২, ২০২৫

  • কোন মন্তব্য নেই

    ঘণ্টা তিনেকেই উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের স্বাদ; ‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ ও ‘নিঃশেষে নৈবেদ্য’ বই দুটির প্রকাশনা উৎসব

    ঘণ্টা তিনেকেই উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের স্বাদ;

    ছবি: সংগৃহীত

    নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা ফ্ল্যাশ

    ‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’—গ্রন্থটির নাম শুনে কেউ ভাবতে পারেন এটি ইতিহাসের বই, কেউ বা মনে করতে পারেন প্রবন্ধ বা ভ্রমণ কাহিনী। আবার কেউ ভাবতে পারেন এটি একটি গবেষণাধর্মী রচনা। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমীন প্রথমে ভেবেছিলেন এটি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা। কিন্তু বইটি পড়ে তাঁর ধারণা বদলে যায়। তিনি এটিকে জীবনের গল্প, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী ও গবেষণার মিশেলে তৈরি একটি নান্দনিক জীবনীগ্রন্থ হিসেবে বর্ণনা করেন।

    রোববার (১১ মে) সন্ধ্যায় ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে কানাডাপ্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক নজরুল মিন্টোর দুটি বই—’উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ ও ‘নিঃশেষে নৈবেদ্য’—এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

    লেখক নজরুল মিন্টো তাঁর বইটিকে ‘নন-ফিকশন ন্যারেটিভ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বইটিতে উঠে এসেছে বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার সময়কার মানসিক দ্বন্দ্ব, কর্মক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয়ের সংকট, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা এবং প্রবাসের একাকিত্বের গভীর অনুভূতি। তবে শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, এটি সমগ্র অভিবাসী জীবনের একটি সার্বিক প্রতিচ্ছবি। লেখকের রসবোধ, ভাষার সাবলীলতা ও অন্তর্দৃষ্টি বইটিকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পাঠযোগ্য রচনায় পরিণত করেছে।

    অন্যদিকে, ‘নিঃশেষে নৈবেদ্য’ বইটি প্রবাসী জীবনের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে রচিত। যারা উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে, তাদের অনেকেই হারিয়ে গেছেন বাস্তবতার নির্মমতায়। এই বই সেইসব মানুষের গল্প বলে—যেখানে প্রবাস জীবন হয়ে উঠেছে এক করুণ পরবাস। বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ সুজিত মোস্তফা বইটি সম্পর্কে বলেন, “এটি শুধু গল্পের বই নয়, প্রবাসের বেদনার একটি দলিল।”

    কবি ও গবেষক অপূর্ব শর্মার সঞ্চালনায় প্রকাশনা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন কবি রোমানা চৌধুরী, সাংবাদিক আনিস আলমগীর, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সালিম সাবরিন, ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং লেখকের সহধর্মিণী আফিয়া খানম। আলোচনায় অংশ নেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ, প্রচ্ছদ শিল্পী তাসিন, লেখক রাজিবুল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফুল হাসান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন লুলুয়া ইসহাক মুন্নি। সংগীত পরিবেশন করেন সুজিত মোস্তফা, লাভলী দেব, রুম্পা চৌধুরী ও নিশি কাওসার।

    অতিথিরা বলেন, নজরুল মিন্টো তরুণ বয়স থেকেই লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। আশির দশকে ফেঞ্চুগঞ্জে প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার কৃতিত্ব তাঁর। প্রবাস জীবনেও তিনি লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে সমাজবীক্ষণ, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিবাসী জীবনের নানা দিক। বিশেষ করে, ‘যুদ্ধশিশু’ শব্দটি বাংলায় প্রথম ব্যবহারের কৃতিত্ব তাঁর—যা একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের সন্তানদের পরিচয় তুলে ধরে।

    ‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ ২৫৬ পৃষ্ঠার একটি সুখপাঠ্য বই, যাতে ৬৬টি বৈচিত্র্যময় লেখা স্থান পেয়েছে। এতে কানাডা ও আমেরিকার ইতিহাস, সংস্কৃতি, অভিবাসীদের সুখ-দুঃখ এবং লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে। বইটি পড়লে মনে হবে, যেন মাত্র তিন ঘণ্টায় উত্তর আমেরিকা ভ্রমণ করা হলো।

    অন্যদিকে, ‘নিঃশেষে নৈবেদ্য’ প্রবাসের অজানা গল্প নিয়ে রচিত, যা পাঠককে নিয়ে যায় এক গভীর আবেগঘন যাত্রায়।

    বই দুটি প্রকাশ করেছে অভ্র প্রকাশন। অনুষ্ঠানের শেষে লেখক নজরুল মিন্টো উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং তাঁর লেখালেখির অভিজ্ঞতা শোনান।

    জ/ক