নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ফ্ল্যাশ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত, সহিংসতা ও খাদ্যসংকটের কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
অনুপ্রবেশের প্রধান কারণ
রাখাইনে আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যে সংঘর্ষ এবং খাদ্য ও ওষুধের সংকটকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি দখল করছে এবং খাদ্য কেড়ে নিচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে।
নতুন রোহিঙ্গাদের অবস্থান
আরআরআরসির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, গত এক বছরে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা এখনো হয়নি।
রাখাইনের সংঘাতের চিত্র
মিয়ানমারের গণমাধ্যমগুলো জানায়, আরাকান আর্মি ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। গত এপ্রিলে আরসার ৪০ জন সদস্যকে আটক করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের কারণে মংডু টাউনশিপে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত।
রোহিঙ্গাদের বক্তব্য
টেকনাফের শালবন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল গফুর বলেন, আরাকান আর্মির অত্যাচারে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। অনেককে ঘুষ দিয়ে সীমান্ত পার হতে হয়েছে। অন্য রোহিঙ্গা আমির হামজা জানান, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং অনেককে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
অনুপ্রবেশের পথ
রোহিঙ্গারা প্রধানত নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের ২২টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রাতে নাফ নদী দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা আসে। কিছু রোহিঙ্গা ট্রলারে করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, মহেশখালী ও অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছাচ্ছে। গত শনিবার পতেঙ্গায় ৩৫ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।
বিজিবির তৎপরতা
বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, গত কয়েক মাসে অনেক রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে রাতে দুর্গম এলাকায় কিছু অনুপ্রবেশ ঘটছে।
সমাধানের আহ্বান
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আরাকান আর্মির আচরণ না বদলালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে, যার মধ্যে ২০১৭ সালের পর থেকে ৮ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। গত আট বছরে কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জ/ক