[t4b-ticker] ‘মব ভায়োলেন্সকারীদের’ প্রতি সরকার নমনীয়: আনু মুহাম্মদ - Dhaka Flash



ব্রেকিং নিউজ:
আজ : ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার প্রকাশ করা : মার্চ ২২, ২০২৫

  • কোন মন্তব্য নেই

    ‘মব ভায়োলেন্সকারীদের’ প্রতি সরকার নমনীয়: আনু মুহাম্মদ

    ‘মব ভায়োলেন্সকারীদের’ প্রতি সরকার নমনীয়: আনু মুহাম্মদ

    আনু মুহাম্মদ

    নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা ফ্ল্যাশ

    দেশে নারীরা এখন নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তনের সুযোগে কিছু গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। যারা সংঘবদ্ধভাবে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা (মব ভায়োলেন্স) করছে, তাদের প্রতি সরকার নমনীয় হয়ে যাচ্ছে।

    শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সারা দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকালে ১২ ছাত্রনেতার নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে অপসারণ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ নারী শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত ও সাইবার সুরক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র-জনতা।

    সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে নারীর উপস্থিতি ও সক্রিয়তা কমানোর জন্য কিছু গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা নারীর অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে থামানোর চেষ্টা করছে। তারা নারীর সক্রিয়তা পছন্দ করে না, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের পছন্দ করে না। তারা শাপলা-শাহবাগ বিভাজন তৈরি করে সাম্প্রদায়িক ও লিঙ্গীয় বিভাজন সৃষ্টি করছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো বয়সের নারী, শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো ধর্ম, জাতি ও ভাষার নারী নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাও নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন। এমনকি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

    জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় শ্রমিক জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কিন্তু গত কয়েক মাসে লক্ষাধিক শ্রমিক নতুন করে বেকার হয়েছেন। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নেয়নি।’

    বসুন্ধরা শিল্পগোষ্ঠীর মালিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গোষ্ঠীর মালিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। অথচ সেই মালিকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে প্রকাশ্যে সভা করে ঋণের সুবিধা নিচ্ছে এবং ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ পাচ্ছে।’

    সরকারের দ্বিমুখী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শ্রমিকরা যখন বকেয়া মজুরির দাবি করছে, শিক্ষকরা যখন কাজের নিরাপত্তা চাইছে, নারীরা যখন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন করছে, তখন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তাদের ওপর ভয়ংকর রকম আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কিন্তু যেসব গোষ্ঠী ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত ও শ্রেণিগত বৈষম্যের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে এবং সংঘবদ্ধভাবে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা চালাচ্ছে, তাদের প্রতি সরকার নমনীয় হয়ে যাচ্ছে।’

    ছাত্র-জনতার সমাবেশের পাশেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সমাবেশে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এই স্লোগান স্বাগত জানাই। দিল্লির কোনো আধিপত্য বাংলাদেশে চলবে না। তবে এই স্লোগানের পাশাপাশি দিল্লি কীভাবে বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করছে, তা স্পষ্ট করতে হবে। দিল্লি, ইসলামাবাদ, ওয়াশিংটন, বেইজিং বা মস্কোর কোনো আধিপত্য বাংলাদেশে চলবে না।’

    তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পেছনে যে স্থায়ী সরকার আছে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। স্থায়ী সরকার কারা? তারা হলো সামরিক বাহিনী, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, বহুজাতিক কোম্পানি এবং বাংলাদেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির মতো প্রতিষ্ঠান। যে সরকারই আসুক, এদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রা কখনোই সম্পন্ন হবে না।’

    সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। সঞ্চালনা করেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা। এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত এবং জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম।

    সমাবেশে বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সংহতি জানান। সমাবেশের শুরুতে উদীচী ও বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন।