কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধ কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে শিশুটিকে অন্তত ৩ বার ধর্ষণ করেছেন। শনিবার (৮ মার্চ) দিবাগত রাতে লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ভুশ্চি গ্রামে সর্বশেষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর গ্রামের কয়েকজন মাতবর শনিবার রাত ১০টায় শিশুটির বাড়িতে সালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। উভয় পক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত জুরি বোর্ড বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। বৃদ্ধের পক্ষ থেকে ২ হাজার টাকা সালিসের সভাপতির কাছে জমা দেওয়া হয় এবং রায় কার্যকর করা হয়। তবে রাত ২টার দিকে যৌথ বাহিনীর একটি টিম সালিস বৈঠকস্থলে পৌঁছালে সালিসদাররা পালিয়ে যান। শিশুটির মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শুনে বৃদ্ধ আবাদ উল্যাহকে আটক করা হয়।
রবিবার দুপুরে নির্যাতিত শিশুটির মা বাদী হয়ে আবাদ উল্যাহর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে লালমাই থানায় মামলা করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, নির্যাতিত শিশুটি স্থানীয় একটি মহিলা মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভুশ্চি গ্রামের হিরন মিয়ার পরিত্যক্ত রান্নাঘরে শিশুটিকে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বৃদ্ধ আবাদ উল্যাহ। ১০ দিনের ব্যবধানে একইভাবে শিশুটিকে তিনি তিনবার ধর্ষণ করেন। গত ৭ মার্চ দুপুরে বাড়ির অন্য শিশুদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে শিশুটির মা জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ধর্ষণের বর্ণনা দেয়।
শিশুটির চাচা জানান, ধর্ষণের অভিযোগের বর্ণনা শুনে গ্রামের মাতবররা বৃদ্ধ আবাদ উল্যাহকে সালিস বৈঠকে নিয়ে আসতে বললে শনিবার রাত ১০টায় গ্রামের কয়েকজন যুবক তাকে একটি চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আসে। বৈঠকে দুই পক্ষের জুরিদাররা একমত হয়ে বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। বৃদ্ধের পক্ষ থেকে ২ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয় এবং রায় কার্যকর করা হয়। তবে রাত ২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সালিস বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। পরে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে এবং শিশুটির বর্ণনা শুনে বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সালিস বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন জানতে চাইলে শিশুটির চাচা বলেন, মন্তাজ ভুঁইয়া সাহেবের সভাপতিত্বে ও আবদুস ছোবহান সাহেবের পরিচালনায় সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৃদ্ধের পক্ষে জুরিদার ছিলেন ফজলুর রহমান মিন্টু ও জাকির হোসেন। আর শিশুটির পক্ষে ছিলেন আবদুল মালেক ও মানিক মিয়া। এছাড়া গ্রামের অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সালিস বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ও ভুশ্চি গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান মিন্টু বলেন, গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে শনিবার রাতে সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিশুটির চিকিৎসা খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বৃদ্ধের পক্ষ থেকে ২ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয় এবং রায় কার্যকর করা হয়। তবে রাত ২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সালিস বৈঠক সমাপ্ত হয়ে যায়।
ভুশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক রেদোয়ান হোসেন বলেন, লালমাই আর্মি ক্যাম্পের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে খবর পেয়ে পুলিশও সেখানে যায়। শিশুটির পরিবারের বক্তব্য শুনে বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশের আগমনের আগে বাড়ির উঠানে সালিস বৈঠক চলছিল বলে জানা যায়।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশুটির মা ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। ভিকটিমকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানানো হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের তদন্ত চলমান রয়েছে।