গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন কেন?
গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা ফ্ল্যাশ
রোববার দিবাগত রাত তিনটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের নিয়ে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যেকোনো মূল্যে এটাকে প্রতিহত করা হবে বলে তিনি জানান।
এই সংবাদ সম্মেলনের সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, গভীর রাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকার প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? সকালে ডাকলে কী সমস্যা হতো? অনেকে মনে করছেন, এই সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন কিছু বলেননি, বরং গতানুগতিক কথাই বলেছেন। তাই এটাকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন বলা যুক্তিযুক্ত কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই সংবাদ সম্মেলনের পটভূমিতে রয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি। রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তারা দেশে ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগ চান। এ সময় তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বেলা ১টার মধ্যে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেন। এছাড়াও, সোমবার দুপুরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বিক্ষোভ মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বলেন, দেশে চাঁদাবাজরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যা প্রমাণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এই বিক্ষোভের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের দুটি ভয়ংকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ভিডিওতে দেখা যায়, বনশ্রীতে এক ব্যক্তিকে গুলি করে ও কুপিয়ে তাঁর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এই ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি মো. আনোয়ার নামের এক ব্যবসায়ী, যিনি প্রতিদিন দোকান থেকে রাতে বাসায় ফেরেন। দ্বিতীয় ভিডিওটি মোহাম্মদপুরের, তবে এর সত্যতা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায় মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। হাজারীবাগ থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, শংকরে আলী হোসেন কলেজের সামনে কিছু যুবক জড়ো হওয়ায় স্থানীয় মসজিদ থেকে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছিল, তবে কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটেনি।
এই আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টহল কার্যক্রম আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সোমবার থেকে যেন কোথাও কোনো অপরাধ না ঘটে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে উন্নত হবে এবং অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই পরিস্থিতিতে কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মজার ছলে লিখেছেন, ‘রাত তিনটার সময় যে সাংবাদিকেরা প্রেস কনফারেন্সে যাবেন, তারা ঘড়ি, মোবাইল, মানিব্যাগ ও মাইক্রোফোন ইত্যাদি সাবধানে রাখবেন।’