ন্যাটো বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: ইউক্রেন ইস্যুতে বদলে গেল নীতি

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা ফ্ল্যাশ
১২ ফেব্রুয়ারি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মার্কিন প্রশাসনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এসেছে, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর অবস্থানকে আমূল বদলে দিয়েছে। বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে স্বাগত জানানো। তবে বাস্তবে বৈঠকটি হয়ে ওঠে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির প্রতিফলন, যা রাশিয়ার কিছু দাবির পক্ষে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোন আলোচনা ন্যাটো জোটের মধ্যে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প ১০ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হয়তো রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে। এই মন্তব্য ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট বৈঠকে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য এড়িয়ে গেলেও তিনি জানান, ন্যাটো ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তবে বৈঠকের দিনেই ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিটের ফোন আলোচনা ন্যাটো জোটের অনেক নেতাকে হতবাক করেছে।
ন্যাটো জোটের সদস্যপদ নিয়ে ইউক্রেনের আশা-আকাঙ্ক্ষাও এবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ স্পষ্ট করে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ লাভের সম্ভাবনা বাস্তবসম্মত নয়। তবে তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টিও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি।
ইউরোপীয় নেতারা ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজতে চাইলেও, লন্ডনের রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ম্যাথিউ স্যাভিলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সিদ্ধান্ত ইউরোপ ও ইউক্রেনকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করছে। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের কথা না ভেবে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করে। আর এর ফল ভোগ করতে হয় ইউরোপ ও ইউক্রেনকে।”
ন্যাটো জোটের প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়েও নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। জোটভুক্ত দেশগুলোর জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এক-তৃতীয়াংশ দেশই ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “২ শতাংশ যথেষ্ট নয়; এটিকে ৫ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন।”
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটও একই সুরে বলেছেন, “যদি আমরা ২ শতাংশের মধ্যেই আটকে থাকি, তাহলে চার থেকে পাঁচ বছর পর আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব না।”
এই বৈঠক ন্যাটো জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোকে এখন প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।