দুর্নীতি সব শেষ করে দিচ্ছে, এটা থেকে বের হতেই হবে : ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা ফ্ল্যাশ
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশ সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে। সততা বলতে আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। দুর্নীতি থেকে বের না হলে দেশের কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। দুর্নীতি কোথায় কীভাবে আছে, তা আমলাদের অজানা নয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই হবে, নইলে বাংলাদেশ এগোতে পারবে না। দুর্নীতি এত গভীরে প্রোথিত যে কেউই এর কবল থেকে মুক্ত হতে পারছে না।’
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তৈরি করেছি, যেখানে বসলে সবার দুঃখে বুক ভরে যায়। সবাই শুধু দুঃখই করে যে সিস্টেম এভাবে চলছে! এটি এমন একটি কাঠামোগত সমস্যা, যেখান থেকে মুক্তির উপায় কী, তা বুঝতে পারছি না। আমাদের সামনে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, শুধু সঠিক সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপেক্ষা। দুর্নীতি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা, যা সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কথা বললাম শুধু একটি উদাহরণ হিসেবে।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা সীমিত হওয়ায় দুর্নীতি কতটুকু সমাধান করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে তিনি অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বে আসার পর থেকে আমরা চেষ্টা করছি, তবে তা এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। আজ সকালে অনলাইন সার্ভিস চালুর চেষ্টা করেছি, কিন্তু দেখা গেল সার্ভার ডাউন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চায় আমরা দুর্নীতিমুক্ত হই, কিন্তু আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই না। ব্যক্তিগত লাভের পিছনে ছুটে আমরা জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করছি। আমাদের এই মানসিকতা বদলাতে হবে।’
তরুণ প্রজন্মের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণরা মহাশক্তি। তারা বিশ্বজয় করতে পারে। আমাদের যত অভাব ও ঘাটতি আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে এই প্রজন্ম। জুলাই-আগস্টে তরুণরা যা দেখিয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং একটি বিপ্লবের সূচনা। এই তরুণদের সুযোগ দিতে হবে, তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন নার্সের বিপরীতে তিনজন চিকিৎসক আছেন, যা বিশ্বকে অবাক করে। নার্সিং কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছি, কিন্তু নার্সিং শিক্ষার উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিইনি। নার্স ও কেয়ারগিভারদের চাহিদা বিশ্বজুড়ে রয়েছে, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না।’
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য দুর্নীতিমুক্ত ও দক্ষ প্রশাসন গঠনের প্রয়োজনীয়তা এবং তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস